মুসলিম লীগের লাহোর প্রস্তাবের (১৯৪০) গুরুত্ব কি?
উত্তর : ১৯৩৯ খ্রীষ্টাব্দে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে ভারতের জাতীয় রাজনীতিতে এক জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। একদিকে যেমন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের মতবিরোধ সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছিল এবং ভারতবাসীর মতামত যাচাই না করেই ভারতবর্ষকে ব্রিটেনের পক্ষে সংশ্লিষ্ট করে, অন্যদিকে মুসলিম লীগ জাতীয় কংগ্রেসের বিরোধিতায় সোচ্চার হয় এবং ১৯৩৯ খ্রীষ্টাব্দের শেষ দিকে ব্রিটিশের যুদ্ধনীতির প্রতিবাদে প্রাদেশিক কংগ্রেস মন্ত্রীসভাগুলি পদত্যাগ করলে জিন্নাহ্ কংগ্রেসী অপশাসনের অবসানে উৎফুল্ল হয়ে মুক্তি দিবস পালনের ডাক দেন। এছাড়া মুসলিম জনগণের সমর্থন লাভের আশায় জিন্নাহ্ দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে স্বতন্ত্র মুসলিম রাষ্ট্র গঠনের কর্মসূচী গ্রহণ করেন। ১৯৪০ খ্রীষ্টাব্দের মার্চ মাসে লাহোরে অনুষ্ঠিত মুসলিম লীগের বার্ষিক অধিবেশনে স্বতন্ত্র মুসলিম রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব আনুষ্ঠানিক ভাবে গৃহীত হয়। এই প্রস্তাবটি উত্থাপিত করেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ও জননেতা এ. কে. ফজলুল হক। এই প্রস্তাবে বলা হয়েছিল ভারতের উত্তর-পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলে ভৌগোলিক দিক থেকে সংলগ্ন অঞ্চলগুলির যেখানে মুসলিম সম্প্রদায় সংখ্যাগরিষ্ঠ সেসব অঞ্চলগুলিকে নিয়ে স্বাধীন স্বতন্ত্র রাষ্ট্র গঠন করতে হবে। এই স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র গঠনের আদর্শ ‘পাকিস্তান প্রস্তাব’ নামে পরিচিত। যদিও ‘পাকিস্তান' কথাটি প্রস্তাবের মধ্যে স্থান পায়নি। অনেকের ধারণা জিন্নাহ স্বতন্ত্র রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাবটি রাজনৈতিক দর কষাকষির মনোভাব নিয়েই তুলে ধরেছিলেন। পরবর্তীকালে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির পূর্ণ সুযোগ নিয়ে জিন্নাহ্ পাকিস্তান প্রস্তাবের ভিত্তিতে এক ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলেন।
0 Comments