বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও দীনবন্ধু মিত্রের সাহিত্যে কিভাবে দেশপ্রেম পরিস্ফুট হয়েছিল?
● উত্তর : ১৮৫৮ খ্রীষ্টাব্দের পর ব্রিটিশ অপশাসনের বিরুদ্ধে ভারতবাসীর ক্ষোভ নানাভাবে প্রকাশ পায়। ভারতের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পুনরুজ্জীবনে প্রতিবাদী ও দেশাত্মবোধক সাহিত্যের অবদান গুরুত্বপূর্ণ। সাহিত্যের মাধ্যমে ভারতীয় জাতীয়তাবাদ ও দেশপ্রেমের আদর্শ প্রচার করার ব্যাপারে ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের (১৮৩৮-৯৪ খ্রীঃ) নাম সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। তিনি এই মত প্রচার করেন যে, যে জাতির আদর্শ যত প্রবল, সেই জাতি অন্যের তুলনায় তত বেশী শক্তিশালী। তিনি ইওরোপের দৃষ্টান্ত দেখিয়ে মন্তব্য করেন যে, ইওরোপের জাতিগুলি জাতীয়তাবাদী আদর্শে উদ্বুদ্ধ এবং এই কারণেই তারা শক্তিশালী। বঙ্কিমচন্দ্রের স্বাদেশিকতা ও অনুশীলন ধর্মের ব্যাখ্যা তাঁর প্রতিভার শেষ পর্যায়ে সার্থকরূপ পায়। তিনি শ্রীকৃষ্ণের ধর্মরাজ্য প্রতিষ্ঠার কথা তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ "কৃষ্ণচরিত্রে"প্রকাশ করেন। স্বাদেশিকতা ও স্বদেশপ্রেমের আদর্শ তাঁর সুবিখ্যাত উপন্যাস 'আনন্দমঠ'-এ পূর্ণভাবে বিকশিত। 'আনন্দমঠের 'বন্দেমাতরম মন্ত্র ভারতে রাষ্ট্রীয়ভাব উদ্বুদ্ধ করে এবং এক গভীর দেশপ্রীতির সঞ্চার ঘটায়। 'আনন্দমঠ'এ বর্ণিত একদল দেশপ্রেমিকের আত্মোৎসর্গের কাহিনী চয়ন করে বঙ্কিমচন্দ্র পরোক্ষভাবে বিপ্লবী আদর্শের কথা প্রচার করেন। বঙ্কিমচন্দ্র রচিত 'ভারত-কলঙ্ক, 'ভারতবর্ষের স্বাধীনতা' ও 'বাঙালীর বাহুবল' প্রভৃতি প্রবন্ধে ইতিহাস-চেতনা ও স্বদেশ-চিন্তার পরিচয় পাওয়া যায়।
বঙ্কিমচন্দ্রের কতকগুলি উপন্যাস (যথা—'দুর্গেশনন্দিনী', 'দেবী চৌধুরাণী', 'সীতারাম) এবং রচনা, (যথা— কমলাকান্ত: 'ধর্মতত্ত্ব' প্রভৃতি) ভারতবাসীর মনে দেশাত্মবোধের সঞ্চার করার সহায়ক হয়েছিল।

0 Comments