ডিরোজিও।
• উত্তর: উনিশ শতকে বাংলার নব জাগরণের অন্যতম প্রবাদ পুরুষ হেনরী ডিভিয়ান ডিরোজিও (১৮০৯-১৮৩১ খ্রীঃ)। তাঁর প্রভাবে বাংলায় এক উগ্র সংস্কারবাদী আন্দোলনের অবতারণা হয় যা নব্যবঙ্গ (Young Bengal) আন্দোলন নামে পরিচিত। ১৮০৯ খ্রীষ্টাব্দে কলকাতার এক ইউরোপীয় বা এ্যাংলো-ইন্ডিয়ান পরিবারে তাঁর জন্ম হয়। তিনি হেনরী ড্রামন্ডের কাছে ধর্মতলা একাডেমিতে শিক্ষালাভ করেন এবং পাশ্চাত্যের যুক্তিবাদী ধারণায় উদ্বুদ্ধ হন। ১৮২৬ থেকে ১৮৩১ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি হিন্দু কলেজে শিক্ষকতা করেন। শিক্ষকতাকালে তিনি কলেজের তরুণ ছাত্র সম্প্রদায়ের মনে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। প্রাচীন গ্রীসে দার্শনিক সক্রেটিস যেমন তাঁর শিষ্যদের মনে প্রচলিত সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সম্পর্কে যুক্তিবাদী ধারণা সঞ্চার করেছিলেন, অনুরূপভাবে ডিরোজিও তাঁর ছাত্রদের লক, হিউম, রুশো, টম পেইন-এর চিন্তাধারার সঙ্গে পরিচয় ঘটান। এর পাশাপাশি এ্যাকাডেমিক এ্যাসোসিয়েশন নামে এক সমিতি গঠন করে হিন্দু সমাজের কুসংস্কার, রক্ষণশীলতা ও প্রচলিত কু-প্রথাগুলির বিরুদ্ধে কশাঘাত করেন। ডিরোজিও-র প্রভাবে তাঁর ছাত্র সম্প্রদায় প্রকাশ্যে হিন্দু ধর্মের আচার-ব্যবহার লজ্জন করতে লাগলেন এবং মদ্য ও গোমাংস ভক্ষণের প্রাবল্য দেখা গেল। এইসব কার্যকলাপের ফলে হিন্দু সমাজের রক্ষণশীল সমাজপতিরা কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে ডিরোজিওর বিরুদ্ধে নালিশ জানালেন। এর ফলে ডিরোজিও কর্মচ্যুত হলেন (এপ্রিল ১৮৩১)। ঐ বছরের শেষে ডিরোজিও কলেরায় আক্রন্ত হয়ে মারা যান। ডিরোজিও স্বাধীন চিন্তার বীজ বপন করে যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন তা প্রশংসনীয়। এছাড়া ডিরোজিও ছিলেন মনে প্রাণে একজন স্বদেশপ্রেমী। “আমার স্বদেশের প্রতি” (To my native land) কবিতায় তিনি মাতৃভূমিকে বন্দনা করেছেন।

0 Comments