মেগাস্থিনিস ও ইন্ডিকা।
• উত্তর : আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পর তার সাম্রাজ্য বিভিন্ন সেনাপতির মধ্যে বিভক্ত হয়েছিল। সেলুকাস সাম্রাজ্যের পূর্বাংশের অধিপতি হয়েছিলেন এবং ভারতবর্ষে গ্রীক আধিপত্য বিস্তারের জন্য তিনি খ্রীষ্টপূর্ব ৩০৫ অব্দে সসৈন্যে অগ্রসর হন। এই যুদ্ধে তিনি মৌর্য সম্রাট চন্দ্রগুপ্তের সঙ্গে সন্ধি স্থাপন করেন। তাঁদের মিত্রতা দৃঢ় করার জন্য তিনি মেগাস্থিনিসকে তাঁর দূত রূপে চন্দ্রগুপ্তের রাজধানী পাটলিপুত্রে প্রেরণ করেন ৩০৪ খ্রীঃ পূঃ। দীর্ঘকাল ভারতে অবস্থান করার ফলে তিনি সমকালীন ভারতের সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে একটি সুন্দর বিবরণ তাঁর ইন্ডিকা গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেছেন। সময়ের ব্যবধানে এই গ্রন্থটির মূল অংশ লুপ্তপ্রায়। তথাপি গ্রীক ঐতিহাসিকরা যে অংশ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছেন তা সমকালীন ভারত সম্পর্কে অনেক অজ্ঞাত তথ্য দান করে। বইয়ে মগধ বৃহত্তম রাজ্য, পাটলিপুত্র নগরী ও রাজ প্রাসাদ, রাজার ক্ষমতা ও দায়িত্ব, পৌর শাসন ব্যবস্থা, রাজকর্মচারীদের কর্তব্য ও সামরিক শাসন প্রভৃতি বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তিনি ভারতবাসীর নৈতিক চরিত্রের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। ভারতবাসী ছিল সরল প্রকৃতির। তাদের আচার আচরণ ছিল খুবই সংযত। সমাজে বর্ণভেদ প্রথা ছিল। নারীর মর্যাদা আগের তুলনায় হ্রাস পায়। ঐতিহাসিক ডঃ রমেশচন্দ্র মজুমদারের মতে, যেহেতু তিনি ভারতীয় ভাষা জানতেন না এবং ভারতবর্ষকে গ্রীক চোখ দিয়ে দেখেছিলেন, সেজন্য তাঁর অভিজ্ঞতার বৃত্তের বাইরে তিনি যা কিছু দেখেছিলেন তার প্রত্যেকটি তিনি হয় বিকৃত বা অতিরঞ্জিত করেছিলেন। সেজন্য সম্ভবত তার রচনার কিছু অংশ চাণক্যের বর্ণনার সঙ্গে মেলে না। অর্থশাস্ত্রের সঙ্গে ইন্ডিকার অমিল সত্ত্বেও এ কথা নিঃসন্দেহে স্বীকার করা যায় যে তার ভারত বিবরণ মৌর্য যুগের প্রামাণ্য ইতিহাস হিসাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। মাধ্যমিক ইতিহাস সহায়িকা (IX-X) : ৫

0 Comments