গান্ধার শিল্প:
উত্তর- মৌর্যত্তর যুগে ভারতের শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিপুল অগ্রগতির সময়ে গ্রিক রোমান ও ভারতীয় শিল্পরীতির সংমিশ্রণে গান্ধার শিল্প বিকাশ লাভ করে। এই শিল্পরীতির নমুনা মূলত গান্ধার অঞ্চলেই সর্বাপেক্ষা অধিক পরিমাণে আবিষ্কৃত হওয়ায় এই শিল্পরীতিকে ‘গান্ধার শিল্প' বলে। বুদ্ধমূর্তি ও বৌদ্ধধর্মকে আশ্রয় করে গ্রীক-প্রভাবিত এই শিল্পরীতির বিদেশী আঙ্গিক এক অপূর্ব শিল্পসুষমা লাভ করেছিল যদিও ভারতীয়রা তা প্রসন্ন মনে গ্রহণ করেনি। গান্ধার শিল্পে বুদ্ধমূর্তির অবয়ব গঠনে গ্রীক শিল্পশৈলীর অনুকরণ দেখা গেলেও ভারতীয় ভাবাদর্শ এর মর্মবস্তু ছিল। ঐতিহাসিকের ভাষায়, 'গান্ধার শিল্পীর হাত ছিল গ্রীকের কিন্তু হৃদয় ছিল ভারতীয়' (The Gandhara artist had the hand of a Greek but the heart of and Indian
Dr. Majumder) গান্ধার শিল্পে মহাযান বৌদ্ধধর্মের প্রভাব দেখা যায়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, মানুষের যথার্থ প্রতিকৃতি নির্মাণ করার কৌশল ছিল এই শিল্পরীতির প্রধান বৈশিষ্ট্য। এই শিল্পরীতিতে ভগবান বুদ্ধের মূর্তিগুলি গ্রীক দেবতা এপোলের মত করে সৃষ্টি করা হয়েছে। শকদের আমলে এই শিল্পের সূচনা হয় তবে কুষাণ যুগে খ্রীষ্ট্রীয় প্রথম শতকে গান্ধার শিল্প পূর্ণ বিকশিত চরিত্র ধারণ করে। কণিষ্কের রাজধানী পুরুষপুর (বর্তমান পেশোয়ার) শহরটি গান্ধার শিল্প-শৈলীতে বিশেষভাবে সজ্জিত হয়েছিল। গান্ধার শিল্পরীতি ভারতের অন্তর্দেশে প্রবেশ করতে না পারলেও এই শিল্পরীতির প্রভাব মথুরা ও অমরাবতীর শিল্পরীতিতে দেখা যায়। সমালোচকদের মতে গাদ্ধার শিল্পরীতি ছিল অনেকটা যান্ত্রিক, বৈচিত্র্যহীন। আধুনিক ভারতীয় ঐতিহাসিকগণ এই মত পোষণ করেন যে, গান্ধার শিল্পের পাশাপাশি সমসাময়িক ভারতীয় শিল্পরীতির মান কোনো অংশেই কম ছিল না। তথাপি এই শিল্পকলা ভারতীয় শিল্পরীতিতে নতুন আঙ্গিকের সংযোজন ঘটিয়েছিল।
0 Comments