কৌটিল্য ও অর্থশাস্ত্র:
কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র মৌর্যযুগের ইতিহাস রচনার প্রধান ঐতিহাসিক উপাদান। মৌর্যযুগের শাসনব্যবস্থা সম্বন্ধে অর্থশাস্ত্রে নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়। অর্থশাহকে ভারতের আদি আইন-গ্রন্থ বলেও স্বীকার করা হয়। অর্থশাস্ত্রের লেখক ও রচনাকাল সম্বন্ধে ভিন্ন ভিন্ন মতামত প্রচলিত আছে। অনেকে চাণক্য কৌটিল্য একই ব্যক্তি, তা মনে করেন না, কিন্তু চ্য কথায় বলা হয়েছে— 'বিষ্ণুগুপ্তশ্চচাণক্য: কৌটিল্যশ্চাশ্মি নামতঃ' অর্থাৎ চাপ ও কৌটি একই ব্যক্তি। কিথ, উইন্টারনিজ প্রভৃতির মতে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের প্রধানমন্ত্রী কৌটিল্য বা চাণক্য অর্থশাস্ত্রের রচয়িতা নন। অন্যদিকে অধ্যাপক এ ব্যাসাম মনে করেন যে প্রস্তুটি নিশ্চিতভাবে গুপ্তপূর্বযুগে রচিত হয় এবং চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের সহযোগী ও প্রধানমন্ত্রী কৌটিল্য এর প্রণেতা। তবে পরবর্তীকালে গ্রন্থটি পরিমার্জিত ও সংযোজিত হয়েছিল।
অর্থশাস্ত্র ১৫টি অধিকরণ-এ বিভক্ত। প্রতিটি অধিকরণে আবার কয়েকটি করে অধ্যায় আছে। অধ্যায়ের সংখ্যা ১৮০-এরও বেশী। কৌটিল্য রচিত অর্থশাস্ত্রে স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রের প্রতি ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। তবে রাজা যদিও রাজ্যের সর্বময় কর্তা, কিন্তু তাঁকে জনকল্যাণের দিকে দৃষ্টি রেখে রাজ্য শাসন পরিচালনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উচ্চ রাজকর্মচারী ও মন্ত্রী পরিবদের সঙ্গে পরামর্শ করে রাজ্য শাসনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অর্থশাস্ত্রে আরও বলা হয়েছে যে আর্থিক স্বচ্ছলতাই রাষ্ট্রের বল। রাজকোষের উপর দৃষ্টি রেখে সরকারী ব্যয়। নার যুক্তি দেখানো হয়েছে। এই বইয়ের নানা বিষয়ের সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রেই ভারতের বাস্তবরূপের কোন সম্পর্ক নেই৷ তথাপি প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের উপাদান ও মৌর্যশাসনব্যবস্থা সম্বন্ধে অর্থশাস্ত্র' একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ।

0 Comments