Ad Code

উত্তর ভারতের নদনদীর সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।




Advertisements

 উত্তর ভারতের নদ-নদীর মধ্যে গঙ্গা, সিন্ধু ও ব্রহ্মপুত্র এবং এদের উপনদী ও শাখানদীগুলিই প্রধান। এছাড়া উত্তর ভারতের আর একটি উল্লেখযােগ্য নদী হল লুনি।

(১) গঙ্গা : ভারতের প্রধান নদী গঙ্গা। এর মােট দৈর্ঘ্য প্রায় ২.৫১০ কিমি.। এর মধ্যে ভারতে আছে প্রায় ২,০৭১ কিমি.। উত্তরাঞ্চলে কুমায়ুন হিমালয়ের অন্তর্গত গঙ্গোত্রী হিমবাহের গােমুখ তুষারগুহা থেকে গঙ্গা নদীর উৎপত্তি। তবে উৎসের কাছে এর নাম ভাগীরথী। দেবপ্রয়াগের কাছে এসে ভাগীরথী তার অন্যতম প্রধান উপনদী অলকানন্দার সঙ্গে মিলিত হয়েছে। ভাগীরথী ও অলকানন্দার মিলিত প্রবাহ এরপর গঙ্গা নামে শিবালিক পার্বত্য অঞ্চলের মধ্য দিয়ে আরও দক্ষিণদিকে প্রবাহিত হয়ে হরিদ্বারের কাছে পার্বত্য অবস্থা অতিক্রম করে সমভূমিতে প্রবেশ করেছে। এরপর গঙ্গা নদী প্রথমে দক্ষিণমুখী এবং পরে পূর্বমুখী হয়ে উত্তরপ্রদেশ ও বিহার রাজ্যের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে রাজমহল পাহাড়ের কাছে এসে পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করেছে। সেখান থেকে কিছুটা পথ দক্ষিণ-পূর্বদিকে প্রবাহিত হওয়ার পর গঙ্গা মুর্শিদাবাদ জেলার ধুলিয়ানের কাছে এসে পদ্মা ও ভাগীরথী—এই দুটি শাখায় ভাগ হয়েছে। প্রধান শাখাটি প্রথমে পদ্মা ও পরে মেঘনা নামে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে গিয়ে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে। কীণশ্রোতা দ্বিতীয় শাখাটি ভাগীরথী-হুগলী নামে পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে বয়ে গিয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। মােহানার কাছে এসে গঙ্গা নদী পৃথিবীর বৃহত্তম ব দ্বীপ সৃষ্টি করেছে।

গঙ্গার সুদীর্ঘ গতিপথে ডান দিক থেকে যমুনা ও শােন এবং বাম দিক থেকে গােমতী, ঘর্ঘরা, রাম গঙ্গা, গণ্ডক, কোশী প্রভৃতি উপনদী এসে পড়েছে। গঙ্গার এইসব উপনদীর মধ্যে যমুনা সর্বপ্রধান। যমুনোত্রী হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হয়ে যমুনা নদী এলাহাবাদের কাছে গঙ্গা নদীতে পড়েছে। চম্বল, বেতোয়া, কেন, শারদা প্রভৃতি যমুনার ডান তীরের উল্লেখযোগ্য উপনদী।

(২) সিন্ধু : উত্তর-পশ্চিম ভারতের প্রধান নদী সিদ্ধু। তিব্বতের সিনবাব হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হয়ে সিন্ধুনদ জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এরপর নাঙ্গা পর্বতের কাছে দক্ষিণমুখী হয়ে পাকিস্তানের ওপর দিয়ে আরব সাগরে পড়েছে। সিন্ধুর মােট দৈর্ঘ্য ২,৮৮০ কিমি.। এর মধ্যে মাত্র ৭০১ কিমি, ভারতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

সিন্ধুর উপনদীসমূহের মধ্যে পাঁচটি প্রধান। এগুলি হল শতদ্রু, বিপাশা, ইরাবতী, চন্দ্রভাগা ও বিতস্তা বা ঝিলাম।

(৩) ব্রহ্মপুত্র: উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রধান নদ ব্রহ্মপুত্র। তিব্বতের রাক্ষসতাল-মানস সরােবরের প্রায় ৯০ কিমি. দক্ষিণ-পূর্বে চেমায়ং দুং নামক হিমবাহ থেকে ব্রহ্মপুত্রের উৎপত্তি। সেখান থেকে ব্রহ্মপুত্র প্রথমে সাংপাে নামে তিববত মালভূমির ওপর দিয়ে পূর্বদিক বরাবর প্রায় ১,৫০০ কিমি.র বেশি প্রবাহিত হয়েছে। তারপর নামচাবারােয়া শূঙ্গের কাছে দক্ষিণ-পশ্চিমদিকে বাঁক নিয়ে ডিহং নামে অরুণাচল প্রদেশে প্রবেশ করেছে। ডিহং অসমে প্রবেশ করেছে সদিয়ার কাছে। এই সদিয়ার কাছেই ডিবং ও লােহিত নদী এসে ডিহং-এর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। এরপর ডিহং, ডিং এবং লােহিতএই তিনটি নদীর মিলিত জল ব্রহ্মপুত্র নামে পশ্চিমমুখী হয়ে অসমের ওপর দিয়ে ধুবড়ী পর্যন্ত বয়ে গেছে। ধুবড়ী থেকে ব্রহ্মপুত্র দক্ষিণমুখী হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে এবং তারপর গােয়ালন্দের কাছে পদ্মার সঙ্গে মিলিত হয়ে শেষে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। অসম উপত্যকার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় ভূমির ঢাল খুব কম বলে এখানে ব্রহ্মপুত্রের গতি খুব মন্থর। এজন্য ব্রহ্মপুত্র বিনুনীর মতাে একেবেঁকে প্রবাহিত হয়েছে এবং নদীখাতে অনেক বালুচর বা দ্বীপের সৃষ্টি হয়েছে। এগুলির মধ্যে ৯২৯ বর্গ কিমি. আয়তনযুক্ত মাজুলী দ্বীপটি পৃথিবীর বৃহত্তম নদী দ্বীপ।

ব্রহ্মপুত্রের অনেকগুলি উপনদী আছে। এগুলির মধ্যে সুবন্সিরি, ভরলী, মানস, সংকোশ প্রভৃতি ডান তীরের উল্লেখযােগ্য উপনদী। ও বাম তীরের উপনদীসমূহের মধ্যে ধানসিঁড়ি, কপিলী ও লােহিত প্রধান।

(৪) লুনি: উত্তর ভারতের আর একটি উল্লেখযােগ্য নদী লুনি। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৪৫০ কিমি.। লুনি রাজস্থান মরু অঞ্চলের নদী। আজমীরের পাশে আনা সাগর হ্রদ থেকে উৎপন্ন হয়ে লুনি কচ্ছের রাণ অঞ্চলে পড়েছে। এই নদীটির জল লােনা বলে এর নাম লুনি।


Download Link of this Content
Advertisements
Best Search Engine Optimization
Advertisements

Post a Comment

0 Comments