আহ্নিক গতির ফলাফল আলোচনা কর।
• উত্তর : আহ্নিক গতির ফলে দিন-রাত্রি সংঘটিত হয়, জোয়ার-ভাঁটা সৃষ্টি হয়, বায়ুপ্রবাহ ও সমুদ্রস্রোতের গতিবিক্ষেপ হয় এবং সময় গণনা করা হয়। এমনকি উদ্ভিদ ও প্রাণিজগৎ সৃষ্টির পিছনে আহ্নিক গতির প্রভাব রয়েছে।
১] দিন-রাত্রি : পৃথিবীর আবর্তন বা আহ্নিক গতির ফলে পৃথিবীর কোন স্থান সূর্যের আলোর আলোকিত হচ্ছে, আবার কোথাও আলোর অভাবে রাতের অন্ধকার। পৃথিবীর নিজস্ব কোন আলে নেই। সূর্যের আলোই পৃথিবীকে আলোকিত করে। তবে পৃথিবী অভিগত গোলক বলে সূর্যের আলো পৃথিবীর সব জায়গায় সমানভাবে পড়ে না। আবর্তনের ফলে পৃথিবীর যে দিকটা সূর্যের সামনে আসে সে দিকটা আলোকিত হয়। ফলে সেখানে দিন হয় আর তার উল্টো দিকে যেখানে সূর্যের আলো পৌঁছয় না সেখানে হয় রাত্রি।
[২] জোয়ার-ভাঁটা : পৃথিবীর আবর্তনের ফলে যে স্থান যে সময়ে চন্দ্রের সামনে আসে তখন সেখানকার জলরাশি ফেঁপে উঠে জোয়ারের সৃষ্টি করে। ঠিক এর অন্যদিকে চন্দ্রের বিকর্ষণ শক্তির প্রভাবেও জোয়ার দেখা যায়। পৃথিবীর অন্যত্র জলতল নেমে গিয়ে ভাঁটার সৃষ্টি করে ।
৩] বায়ুপ্রবাহ ও সমুদ্রস্রোতের গতি-বিক্ষেপ: পৃথিবীর অভিগত গোলাকৃতির জন্য নিরক্ষরেখা থেকে উভয় মেরুর দিকে আবর্তনের গতিবেগ ক্রমশ কমতে থাকে। আবর্তন বেগের এইরকম তারতম্যের জন্য বায়ুপ্রবাহ, সমুদ্রস্রোত প্রভৃতি গতিশীল পদার্থের গতিপথ উত্তর গোলার্ধে ডান দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বাম দিকে বেঁকে যায়। গতিবিক্ষেপের এই নিয়মটির আবিষ্কারক বিজ্ঞানী ফেরেলের নামানুসারে ফেরেলের সূত্র নামে পরিচিত ।
8] উদ্ভিদ ও প্রাণিজগৎ সৃষ্টি : সূর্যালোকই পৃথিবীর সমস্ত জীবনের উৎস। পৃথিবীর নিয়মিতভাবে আবর্তনের জন্য ভূ-পৃষ্ঠের প্রায় প্রতিটি অংশে পরিমিতভাবে সূর্যালোক পড়ে যা পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন রকম উদ্ভিদ ও জীবজন্তু জন্মাতে সাহায্য করে। উদ্ভিদেরা সূর্যালোক থেকে দিনে শক্তি সঞ্চয় করে এবং রাত্রে ঐ শক্তি নিজেদের শারীরবৃত্তীয় কাজে লাগায়।
৫] সময় গণনা : পৃথিবীর নিয়মিত আবর্তন মানুষের সময় গণনার সহায়ক হয়েছে। পৃথিবীর মোট আবর্তনকালকে ২৪ ভাগে ভাগ করে প্রত্যেক ভাগকে ১ ঘন্টা বলে। আবার ১ ঘন্টাকে ৬০ মিনিটে ও ১ মিনিটকে ৬০ সেকেন্ডে ভাগ করা হয়।

0 Comments