কেন লর্ড কার্জন বাংলাদেশ বিভক্ত করেছিলেন?
উত্তর : বিশ শতকের সূচনায় উগ্র সাম্রাজ্যবাদী বড়লাট লর্ড কার্জন ভারতে ব্রিটিশ শাসন সুরক্ষিত করার উদ্দেশ্যে যে সমস্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করেন, সেগুলির মধ্যে সবচেয়ে বিতর্কিত হল বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত। তাঁর সময়ে বাংলার গভর্নর ছিলেন স্যার অ্যানড্র ফ্রেজার। তাঁর পরিকল্পনা কার্জন অনুমোদন করেন। এই সিদ্ধান্ত অনুসারে ঠিক হল, চট্টগ্রাম বিভাগ, ঢাকা ও ময়মনসিংহ জেলা আসামের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে এবং পুনর্গঠিত প্রদেশ ‘পূর্ববঙ্গ ও আসাম' নামে পরিচিত হবে। নতুন প্রদেশের রাজধানী হবে ঢাকা। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের সাথে বিহার ও উড়িষ্যাকে যুক্ত করে অপর একটা প্রদেশ গঠনের কথা ঘোষণা করা হয়। বঙ্গভঙ্গ কার্যকর করার কারণ হিসেবে কার্জন প্রশাসনিক সুবিধার কথা ঘোষণা করেন। কিন্তু প্রশাসনিক কারণে বঙ্গভঙ্গ হয়েছিল এ কথা বলা যায় না। অবিভক্ত বাংলার সঙ্গে বিহার ও উড়িষ্যার অবাঙালী ভাষাভাষী অঞ্চলগুলিও সংযুক্ত ছিল। প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধিই যদি এই ব্যবচ্ছেদের কারণ ছিল তাহলে বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চলটিকে দ্বিখণ্ডিত না করে বিহার ও উড়িষ্যাকে নিয়ে একটি স্বতন্ত্র প্রদেশ গঠন করা বেশী যুক্তিযুক্ত ছিল। কিন্তু বঙ্গ-বিভাগের মূলে কার্জন ও তাঁর পরামর্শদাতাদের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক। কার্জনের ভারতবাসীর আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতি সহানুভূতি ছিল না। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন ভারতে জাতীয় আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু হল বাংলাদেশ। তাই যদি বাংলাকে দু'ভাগে করা যায় তাহলে ভারতীয় জাতীয়তাবাদের ওপর চরম আঘাত হানা যাবে এবং স্বদেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ বাঙালীর জাতীয়তাবাদী সংহতি ও শক্তি হীনবল হয়ে পড়বে। বঙ্গভঙ্গ পরিকল্পনার আর একটি উদ্দেশ্য ছিল সাম্প্রদায়িক ভেদনীতি। ইংরেজ শাসকগোষ্ঠী বাংলার হিন্দু ও মুসলমান এই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ ও বিদ্বেষভাব সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন। প্রসঙ্গত বলা যায়, পূর্ব বাংলার ৩ কোটি ১০ লক্ষ জনসংখ্যার মধ্যে ১ কোটি ৮০ লক্ষ ছিলেন মুসলিম।

0 Comments