মুঘল স্থাপত্য শিল্প সম্বন্ধে যা জান লেখ?
• উত্তর : মুঘল স্থাপত্য শিল্পের প্রথম দিকে বাবর ও হুমায়ুন পারসিক রীতি অনুসরণ করেছিলেন। তবে মুঘল স্থাপত্যশিল্পের প্রকৃত বিকাশ ঘটেছিল আকবরের সময় থেকে। তিনি লাল পাথর দিয়ে বিশালাকার দুর্গ নির্মাণের যে ঐতিহ্য গড়ে তোলেন শাহজাহান কর্তৃক বিখ্যাত ‘লাল কেল্লা' (দিল্লী) নির্মাণে তার চূড়ান্ত পরিণতি ঘটেছিল। আকবর ১৫৭২-এ আগ্রার কাছে ফতেপুর সিক্রীতে যে প্রাসাদ-দুর্গ নির্মাণ করেন তাতে দেশী ও বিদেশী দুই ধরনের স্থাপত্যরীতির সমন্বয় লক্ষ্য করা যায়। ফতেপুর সিক্রীর দালানে গুজরাটী ও বাংলার স্থাপত্যরীতির প্রভাব যেমন স্পষ্ট তেমনি মধ্য এশিয়ার প্রভাব লক্ষণীয়। আকবর গুজরাট-বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ‘বুলন্দ দরওয়াজা’নামে একটি ফটক নির্মাণ করেন। এই পদ্ধতিতে তোরণ নির্মাণ করা পারসিক স্থাপত্যের বৈশিষ্ট্য। মুঘল আমলে এই আঙ্গিকে অনেক দালান নির্মিত হয়েছিল। জাহাঙ্গীরের সময় থেকে স্থাপত্য অলংকরণে যে নতুন শৈলী লক্ষ্য করা যায় তা 'পিয়েত্রা দুরা’নামে অভিহিত। এই নতুন পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য হল, দালান তৈরীর জন্য মার্বেলের ব্যবহার এবং দামী পাথর দিয়ে দেওয়াল অলংকরণ। স্থাপত্যের পৃষ্ঠপোষক হিসাবে শাহজাহান ছিলেন মুঘল সম্রাটদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। স্থাপত্য-অলংকরণে “পিয়েত্রা দুরা’ পদ্ধতির চরম বিকাশ ঘটেছিল শাহজাহানের আমলে। শাহজাহানের নির্মিত তাজমহলে শ্বেত পাথরের ওপর কারুকার্য ও চিত্রাঙ্কনের অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছিল। তাজমহল ব্যতীত তাঁর মলের অপরাপর প্রাসাদ ও সৌধগুলির মধ্যে দেওয়ান-ই খাস, দেওয়ান-ই-আম, জুম্মা মসজিদ, মোতি মসজিদ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। ঔরঙ্গজেবের শাসনকালে মুঘল স্থাপত্যের অবনতি ঘটলেও তার ঐতিহ্য একেবারে লুপ্ত হয়ে যায় নি। প্রাদেশিক ও স্থানীয় রাজ্যগুলির শাসকগণ মুঘল স্থাপত্যের অনুকরণে দালান, প্রাসাদ, স্মৃতিস্তম্ভ প্রভৃতি নির্মাণ করে ঊনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত মুঘল স্থাপত্যের ঐতিহ্য অব্যাহত রেখেছিলেন।
0 Comments