আকবরের রাজসভা।
উত্তর : আকবরের বন্ধু ও ঐতিহাসিক আবুল ফজলের রচনা থেকে আকবরের রাজসভার বিস্তৃত বিবরণ জানা যায়। আকবর প্রতিদিন তিনবার রাজসভায় আসতেন। ঝারোখা ই-দর্শন নামে একটি প্রথা চালু ছিল। এই প্রথা অনুসারে সম্রাট প্রতিদিন সকালে পূর্ব দিকের অলিন্দে এসে প্রত্যেককে দর্শন দিতেন এবং প্রজাদের অভাব অভিযোগ শুনতেন। আকবরই প্রথম এই প্রথার প্রচলন করেন। এরপর প্রচলিত বিধান অনুসারে দেওয়ান-ই-আম এ রাজসভা বসত। এখানে সামরিক ও অ-সামরিক বিভাগের বিভিন্ন পদে নিয়োগ ও অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত নেওয়া হত। এর পরের সভা বসত দেওয়ান-ই-খাস-এ। এই সভায় সম্রাট মন্ত্রী, উচ্চপদস্থ কর্মচারী এবং আমীর ওমরাহদের সঙ্গে অভ্যন্তরীণ ও বিদেশ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেন।
আকবরের রাজসভা শুধুমাত্র প্রশাসনিক ব্যবস্থার কেন্দ্রস্থল ছিল তা নয়, শিল্প ও সংস্কৃতির এক পীঠস্থানে পরিণত হয়। শিল্প ও সাহিত্যের প্রতি আকবরের প্রবল অনুরাগ ছিল। তার রাজসভায় ‘নবরত্ন' বা নয়জন গুণী ব্যক্তির সমাবেশ ঘটেছিল। এরা হলেন— বীরবল, মানসিংহ, টোডরমল, হাকিম হুকুম, কবি ফৈজী, আবুল ফজল, আবদুর রহিম, তানসেন ও মোল্লা দো পিঁয়াজা। আকবরের পৃষ্ঠপোষকতায় উর্দু সাহিত্যের ব্যাপক উন্নতি ঘটে। শেখ মুবারক ও তার দুই পুত্র আবুল ফজল ও ফৈজী আকবরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। আবুল ফজল 'আইন-ই আকবরী’ ও ‘আকবরনামা' সমেত বহু মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেন। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী আবুল ফজলকে স্মিথ ফ্রান্সিস বেকনের সাথে তুলনা করেছেন। এক কথায় আকবরের রাজসভা মুঘল আমলে ভারতীয় সংস্কৃতির পীঠস্থানে পরিণত হয়।
0 Comments