পল্লব শিল্প
উত্তর: ষষ্ঠ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে নবম শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত পল্লব বংশ দক্ষিণ ভারতের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জীবনে এক সৃজনশীল ও গৌরবজনক অধ্যায়ের সূচনা করেছিল। রাজনৈতিক দিক থেকে তাদের আধিপত্য উত্তরে নর্মদা নদী, ওড়িষ্যার সীমানা থেকে দক্ষিণে পেনার নদী পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চলে প্রসার লাভ করে। কিন্তু রাজনৈতিক দিক থেকে নয়, মূলত শিল্প ও সংস্কৃতির দিক থেকে পল্লব যুগের অবদান বেশী স্মরণীয়। দক্ষিণ ভারতের শিল্প ও স্থাপত্যের ক্ষেত্রে পল্লব রাজ্য ছিল পুরোধা। বৈদেশিক প্রভাবমুক্ত সম্পূর্ণ ভারতীয় শিল্পরীতি পল্লব আমলের শিল্পে লক্ষ্য করা যায়। পল্লবদের স্থাপত্য রীতির দুটি দিক উল্লেখযোগ্য (১) পাথর কেটে মন্দির নির্মাণ; (২) রথ আকারে দেবালয় স্থাপন। রাজা মহেন্দ্রবর্মনের রাজত্বকালেই পল্লব শিল্প আত্মপ্রকাশ করে। পল্লব শিল্পরীতিতে চারটি শিল্প শৈলীর সমাবেশ দেখা যায়। এগুলি হল মহেন্দ্র রীতি, মহামল্ল রীতি, রাজসিংহ রীতি ও অপরাজিত রীতি। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, মূলত ধর্মীয় বিষয়বস্তু অবলম্বন করেই পল্লব শিল্প বিকশিত হয়। বৌদ্ধ বিহারের অনুকরণে পাহাড় কেটে মন্দির নির্মাণ ছিল মহেন্দ্র রীতির মূল বিষয়। রথের আকারে নির্মিত মন্দির মহামল্ল রীতি ও নরসিংহ রীতির বৈশিষ্ট্য। এর দৃষ্টান্ত হল মহাবলীপুরমের মন্দির। পাথর দিয়ে স্বাধীন ও স্বতন্ত্র মন্দির নির্মাণ রাজসিংহ রীতির বৈশিষ্ট্য। কাঞ্চীর কৈলাসনাথ মন্দির এর প্রকৃষ্ট দৃষ্টান্ত। পল্লব শিল্পের শেষ পর্বে অপরাজিত রীতি প্রবর্তিত হয়—– চোল শিল্পরীতির সঙ্গে এর সাদৃশ্য রয়েছে।
পরিশেষে একথা বলা যায় যে, পল্লব শিল্পকলা একটি ধর্মকেন্দ্রিক শিল্পকলা এবং বিভিন্ন রাজার আমলে তা পরিবর্তিত ও পরিমার্জিত হয়। ঐতিহাসিক 'পার্সিব্রাউন' এই শিল্পকলার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। এন. কে. রায় এর মতে, শিল্পসৃষ্টি ও নৈপুণ্যে পল্লব শিল্প সমগ্র পৃথিবীর বিস্ময় ছিল। পরবর্তীকালে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রাজারা এই শিল্পের অনুকরণে বিভিন্ন মন্দির নির্মাণ করেন।
0 Comments