মনসবদারী প্রথা।
• উত্তর : সাম্রাজ্যবাদী শাসনকে সুদৃঢ় করার উদ্দেশ্যে আকবর কেন্দ্রীভূত প্রশাসনিক কাঠামো নির্মাণ করেন। প্রভাবশালী অভিজাতদের বিভিন্ন গোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্দেশ্যে যে আমলাতান্ত্রিক বিধিব্যবস্থা প্রবর্তিত হয় তা মনসবদারী প্রথা নামে পরিচিত। ১৭৫৯ খ্রীষ্টাব্দে সমা সেনাবাহিনীকে মনসবদারী প্রথার আওতায় আনা হয়। মনসবদারী কথার অর্থ পদ মর্যাদা। মনসবদারগণ সাম্রাজ্যের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকতেন। মনসবদারী ব্যবস্থার প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল—(১) প্রতিটি মনসবদারকে নির্দিষ্ট সংখ্যক সেনা রাখতে হতো, (২) যোগ্যতার ভিত্তিতে মনসবদারগণ নিযুক্ত হতেন এবং এই প্রথা বংশানুক্রমিক ছিল না, (৩) মনসবদারদের এক স্থান থেকে অন্যত্র বদলী করার রীতি প্রচলিত ছিল, (৪) মনসবদারদের নিয়োগ, পদোন্নতি ও বরখাস্ত সমস্তই সম্রাটের ইচ্ছাধীন ছিল, (৫) মনসবদারদের বেতন ও পদমর্যাদা তাঁদের অধীনস্থ সেনাবাহিনীর সংখ্যার উপর নির্দিষ্ট ছিল। পদমর্যাদার ৩৩টি স্তর ছিল এবং ক্রমানুসারে মনসবদারগণ ১০ থেকে ১০০০০ পর্যন্ত সৈন্য রাখার অধিকার পেতেন। মনসবদারদের কেউ কেউ নগদ অর্থে বেতন পেতেন। তবে সাধারণত মনসবদারগণকে বেতনের পরিবর্তে নির্দিষ্ট পরিমাণ জমি জায়গির দেওয়া হত। এদের ‘তনখজায়গির "বলা হত। উচ্চশ্রেণীর মনসবদাররা ওমরাহ নামে পরিচিত ছিলেন।
এই শাসন ব্যবস্থার প্রধান গুণ ছিল দক্ষতা ও ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র। মুঘল সাম্রাজ্যের শক্তি ও সংহতি এই ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল ছিল। মনসবদারী প্রথা মুঘল সাম্রাজ্যের স্থায়িত্বের রক্ষাকবচ বলে বিবেচিত হয়েছে। অধ্যাপক সতীশচন্দ্রের ভাষায় “দেশে সার্ধশত বর্ষাধিক অভাবনীয় ঐক্য ও সুশাসন স্থাপনের কাজে এটি বিশেষ ভাবে সহায়ক হয়েছিল সন্দ্বেহ নাই।” তবে পরবর্তীকালে মনসবদারদের মধ্যে পারস্পরিক বিবাদ ও ঈর্ষা প্রকট হয়ে ওঠে এবং এই ব্যবস্থার কার্যকারিতা অনেকাংশে ক্ষুণ্ণ হয়। ডঃ যদুনাথ সরকার মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের পেছনে মনসবদারদের অপদার্থতাকে অনেকাংশ দায়ী করেছেন। (8) নূরজাহান।
0 Comments