অল-বিরুনী
• উত্তর : মধ্যযুগের ইতিহাসে যে সকল মণীষীর নাম বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য, তাদের মধ্যে অল-বিরুনী নিঃসন্দেহে অন্যতম। মধ্য এশিয়ার খ্যাতনামা পণ্ডিত অল-বিরুনী সুলতান মামুদের ভারত আক্রমণ কালে তাঁর সঙ্গে ভারতে আসেন এবং দীর্ঘ ১০ বছর ভারতে অতিবাহিত করেন। তিনি আরবী ও পারসিক ভাষায় সুপণ্ডিত ছিলেন। তাঁর প্রকৃত নাম ছিল আৰু রিহান। ১৭৩ খ্রীষ্টাব্দে মধ্য এশিয়ার ঘিবা-তে তাঁর জন্ম হয়। যৌবনকালে তাকে বন্দী করে গজনীতে আনা হয়। কিন্তু তার পাণ্ডিত্যে মুগ্ধ হয়ে সুলতান মামুদ তাকে মুক্তি দেন এবং রাজসভায় স্থান লাভ করেন। তিনি ভারতে অবস্থান কালে সংস্কৃত ভাষা, হিন্দু দর্শন ও ধর্ম সাহিত্য সম্বন্ধে গভীর জ্ঞান। অর্জন করেন। এছাড়া ভারতীয় গণিত ও চিকিৎসা বিদ্যা সম্পর্কে তিনি যথেষ্ট জ্ঞান অর্জন করেন। ভারত সম্বন্ধে তহকিক্-ই-হিন্দ নামে তিনি একটি মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেন। তার তহকিক
ই-হিন্দ’গ্রন্থ থেকে সুলতান মামুদের ভারত অভিযান এবং ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতির পরিচয় পাওয়া যায়। অল্-বিরুনী তাঁর গ্রন্থে সমকালীন ভারতীয় সমাজের এক মনোজ্ঞ বিবরণ দিয়েছেন। অল-বিরুনীর লেখা থেকে জানা যায় যে, সেই সময়ে ভারতীয়রা ছিলেন দাস্তিক ও কুপমণ্ডুক। ব্রাহ্মণরা ছিলেন বিদ্বান ও ন্যায়নিষ্ঠ। তবে জাতিভেদ প্রথা, বাল্য বিবাহ, বহু বিবাহ ও নানা ধরনের কুসংস্কারে সমাজ জীবন ভারাক্রান্ত ছিল। অল-বিরুনীর রচনায় সমকালীন ভারতের রাজনৈতিক অনৈক্য ও অর্থনৈতিক জীবনের বাস্তব সম্মত বিবরণ পাওয়া যায়। ভারতের সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে তার গ্রন্থটিকে এক ‘আকর' গ্রন্থ হিসাবে অভিহিত করা যায়।
0 Comments