বিনয়, বাদল, দীনেশ স্মরণীয় কেন?
উত্তর : বিশের দশকের শেষ থেকে বাংলার বৈপ্লবিক প্রচেষ্টা ১৯৩৫ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত অব্যাহত *ছিল। এই সময়ে কয়েকজন বিশিষ্ট ইংরেজ উচ্চপদস্থ কর্মচারী বিপ্লবীদের হাতে নিহত হয়। ১৯২৮ খ্রীষ্টাব্দে কলকাতায় কংগ্রেস অধিবেশনের সময় সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে এক স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠিত হয়। এই বাহিনীর কিছু সদস্যকে নিয়ে ঢাকায় হেমচন্দ্র ঘোষ বেঙ্গল ভলেন্টিয়ার্স দল গঠন করেন। এই দল সংক্ষেপে বি. ভি. নামে পরিচিত। বি. ভি. দলের কার্যকলাপ ছিল চমকপ্রদ। ১৯৩০ খ্রীষ্টাব্দের আগস্ট মাসে ঢাকা ‘মিটকোর্ড হসপিটালে'র ছাত্র বিনয় কৃষ্ণ বসু লোম্যান ও হডসনকে গুলি করে হত্যা করার চেষ্টা করেন। লোম্যান ছিল কারাসমূহের ইনস্পেক্টর জেনারেল এবং হডসন ঢাকার পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট। লোম্যান মারা গেলেন, কিন্তু হডসন বেঁচে উঠলেন। এই দুই সাহসিক কাজের পর ৮ই ডিসেম্বর বিনয় ও তার দুই বিপ্লবী বন্ধু বাদল গুপ্ত ও দীনেশ গুপ্ত কলকাতার রাইটার্স বিল্ডিংয়ে প্রবেশ করে কারা বিভাগের ইন্সপেক্টর জেনারেল সিম্পসনকে হত্যা করেন। আর একজন ইংরেজ কর্মচারী আহত হন। এরপর পুলিশ তিনজন বিপ্লবীকে ঘিরে ফেলে। ফলত, তিন তরুণের সঙ্গে পুলিশবাহিনীর লড়াই শুরু হয়, যা ইতিহাসে ‘অলিন্দ যুদ্ধ’নামে খ্যাত। পালানো অসম্ভব বিবেচনা করে তিনজনই আত্মহত্যার চেষ্টা করলে বাদলের সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু হয় এবং কয়েকদিন পর হাসপাতালে বিনয় বসু মারা গেলেন। দীনেশ আরোগ্য লাভ করলেও মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হলেন। বিনয়, বাদল ও দীনেশের দুঃসাহসিক কর্মকাণ্ড সমস্ত বাংলায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। এবং তাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগ বাংলার মানুষকে নতুন প্রেরণা জোগায়। এই তিন জন দুঃসাহসিক বিপ্লবীর নামানুসারে কলকাতার ডালহৌসি স্কোয়ারের নাম রাখা হয়েছে “বিনয়-বাদল-দীনেশ (বি-বা-দী) বাগ”।
0 Comments