মওলানা আবুল কালাম আজাদ।
উত্তর : ১৮৮৮ খ্রীষ্টাব্দের ১১ নভেম্বর মওলানা আজাদের জন্ম হয়। তাঁর পিতৃদত্ত নাম আহমদ, কিন্তু আবুল কালাম নামেই তিনি সুপরিচিত। তাঁর পিতা প্রাচ্যবিদ্যায় সুপণ্ডিত, মওলানা খয়েরুদ্দীন যেহেতু পাশ্চাত্য শিক্ষার ঘোর বিরোধী ছিলেন, তাই তিনি গৃহশিক্ষকের সাহায্যে আবুল কালামকে সনাতন রীতিতে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করেন। অসাধারণ মেধাবী আবুল কালাম মাত্র ষোল বছর বয়সে ফারসী, আরবী, দর্শন, জ্যামিতি ও গণিতের সঙ্গে মুসলমান তত্ত্বকথা ও শাস্ত্র পাঠ শেষ করেন। পরবর্তী জীবনে স্যর সৈয়দ আহমদের শিক্ষা সম্বন্ধে চিন্তাধারা তাঁকে আকৃষ্ট করে এবং তিনি নিজের চেষ্টায় ইংরেজি শিখে ইওরোপের ইতিহাস ও দর্শন পড়তে শুরু করেন। শিক্ষার নতুন জগতে প্রবেশ করে আবুল 'কালাম ' পুরোনো জীবন দৃষ্টি থেকে মুক্তির বাহ্যিক পরিচয় হিসেবে ‘আজাদ’ নাম গ্রহণ করেন। এই সময়েই তিনি রাজনৈতিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়েন। ১৯১২ খ্রীষ্টাব্দে তাঁর সম্পাদনায় ‘আল হিলাল’ পত্রিকা প্রকাশ করে তিনি প্রচলিত রাজভক্তিমূলক রাজনীতি অস্বীকার করে বিদ্রোহমূলক রাজনীতির ভিত্তিতে এক নতুন জীবনদর্শন ঘোষণা করেন। এই নীতির মর্মবাণী ছিল সমাজসংস্কার ও হিন্দু মুসলমানের ঐক্য। তিনি গান্ধীজীর নেতৃত্বে।
অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন। ১৯২০ খ্রীষ্টাব্দ থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তাঁর জীবন কংগ্রেসের মাধ্যমে দেশসেবায় নিয়োজিত হয়। ১৯২৩ খ্রীষ্টাব্দে তিনি একবার কংগ্রেস সভাপতি হন। আবার ১৯৪০ থেকে ১৯৪৬ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি কংগ্রেস সভাপতির পদ অলংকৃত করেন। মুসলিম লীগ যখন দেশ বিভাগের দাবী তোলে তখন আবুল কালাম প্রাণপণ বিরোধিতা করেন। এজন্য তাঁকে অনেক লাঞ্ছনা সহ্য করতে হয়েছিল। স্বাধীন ভারতবর্ষের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী (১৯৪৭-৫৮) হিসাবে তাঁর দান চিরকাল স্বীকৃত হবে। তীক্ষ্ম বুদ্ধির আলোকে তিনি সমস্ত সমস্যার বিচার করতেন বলে বিরোধীরাও তাঁর কথা উপেক্ষা করতে পারতেন না। ন্যায়বিচার বোধ তার চরিত্রের ভিত্তি ছিল। ১৯৫৮ খ্রীষ্টাব্দের ২২ ফেব্রুয়ারী যখন তাঁর মৃত্যু হয় তখন জাতিধর্ম ও দলমত-নির্বিশেষে ভারতবাসী মিলন মন্ত্রের এই মহান সাধকের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
0 Comments