অঙ্গসংস্থান গত প্রমাণ এর সাহায্যে অভিব্যক্তির উদাহরণ দাও?
অভিব্যক্তির সপক্ষে অঙ্গসংস্থানগত প্রমাণ
বিভিন্ন ধরনের জীবের শারীরিক অঙ্গের তুলনামূলক আলোচনা করলে স্পষ্ট হয় যে, সরল জীব ধীরে ধীরে জটিল আকার ধারণ করেছে। নীচে কতকগুলি জীবের অঙ্গসংস্থানগত কাঠামোর আলোচনা দেওয়া হল :
1. হৃৎপিণ্ডঘটিত প্রমাণ মাছ, উভচর, সরীসৃপ, পক্ষী, স্তন্যপায়ী প্রভৃতি প্রাণীর হৃৎপিণ্ডের গঠন প্রণালী পরীক্ষা করলে দেখা যায়, এদের হ্যৎপিণ্ডের ভেতর সামান্য পার্থক্য থাকলেও মৌলিক গঠন একই। এই যে সামান্যতম পার্থক্য দেখা যায়, তা ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশে বসবাসের দরুন অভিযোজনের মাধ্যমে ঘটে থাকে। মাছের হাৎপিণ্ড সরল প্রকৃতির—সেখানে কেবল দুটি প্রকোষ্ঠ বর্তমান। একটি অলিন্দ এবং একটি নিলয়। উভচর প্রাণী ব্যাঙের হাৎপিণ্ডে তিনটি প্রকোষ্ঠ বর্তমান। দুটি অলিন্দ এবং একটি নিলয়। সরীসৃপের হৃৎপিণ্ডে দুটি অলিন্দ ও একটি অর্ধবিভক্ত নিলয় থাকে। আবার, পাখি বা মানুষ উভয়েরই হৃৎপিণ্ডে চারটি প্রকোষ্ঠ থাকে – দুটি অলিন্দ ও দুটি নিলয়। এদের নিলয় ও অলিন্দ সম্পূর্ণরূপে দ্বিধাবিভক্ত।
মাছের হৃৎপিণ্ডে কেবল দূষিত রক্ত প্রবাহিত হয়। ব্যাঙের হৃৎপিণ্ডে বিশুদ্ধ রক্তের সঙ্গে সামান্য দূষিত রক্তের মিশ্রণ ঘটে থাকে। সরীসৃপের হাৎপিণ্ডের গঠনে দেখা যায় সেখানেও দূষিত ও বিশুদ্ধ রক্তের সামান্য মিশ্রণ ঘটে। তবে পক্ষী বা স্তন্যপায়ীর ক্ষেত্রে দূষিত ও বিশুদ্ধ রক্ত কোনভাবে মেশে না। সুতরাং বিভিন্ন প্রাণিগোষ্ঠীর হৃৎপিণ্ডের মৌলিক গঠন অভিব্যক্তির সপক্ষে প্রমাণ দেয় ।
2. অগ্রপদের সাদৃশ্য : বাদুড়, পাখি, ঘোড়া, মানুষ, শীল প্রভৃতি প্রাণীর অগ্রপদের কাল বিভিন্ন। কিন্তু এদের প্রত্যেকের অগ্রপদের অস্থির গঠন, আকৃতি মোটামুটিভাবে একই ধরনের। বিভিন্ন পরিবেশে থাকার দরুন এদের অগ্রপদের পরিবর্তন ঘটেছে। বাদুড় ও পাখির অগ্রপদ ওড়ার জন্য, ঘোড়ার অপ্রপদ দৌড়ানোর জন্য, মানুষের অগ্রপদ (হাত) সৃজনশীল কাজের জন্য, শীলের অগ্রপদ সাঁতার দেবার জন্য সৃষ্ট হয়েছে। প্রত্যেক অগ্রপদেই হিউমেরাস, রেডিয়াস, আলনা, কারপাল, মেটাকারপাল, ফ্যালেনজেস ইত্যাদি অস্থি আছে। এর থেকে প্রমাণ পাওয়া যায়, সকল মেরুদণ্ডী প্রাণী একই প্রকার উদ্বংশীয় জীব বা পূর্বপুরুষ থেকে সৃষ্ট হয়েছে।
3. নিষ্ক্রিয় বা লুপ্তপ্রায় অঙ্গঘটিত প্রমাণযেসব অঙ্গ পূর্বপুরুষের দেহে বা সেই জাতীয় অন্য জীবের দেহে সক্রিয় ছিল, কিন্তু ক্রমবিবর্তনের ফলে বর্তমান প্রজন্মে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ছোট আকারের ও কার্যহীন অঙ্গে পরিণত হয়েছে, তাদের লুপ্তপ্রায় বা নিষ্ক্রিয় অঙ্গ বলে।
উদাহরণ : (i) ঘোড়া, গিনিপিগ প্রভৃতি তৃণভোজী প্রাণীর পৌষ্টিকতন্ত্রের ক্ষুদ্রাস্ত্র ও বৃহদন্ত্রের সংযোগস্থলে অবস্থিত সিকাম সক্রিয় অঙ্গ; যা মানুষের ক্ষেত্রে অ্যাপেনডিক্স নামে নিষ্ক্রিয় অঙ্গে পরিণত হয়েছে।

0 Comments